হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, যখন আমরা ভাইবোনদের মধ্যে ঝগড়া বা বিরোধের কারণ খুঁজে দেখি, তখন শুধু কিশোর বা সন্তানদেরকেই দোষী ভাবা ঠিক নয়। অনেক ক্ষেত্রেই এই দ্বন্দ্বের মূল কারণ সন্তানদের নয়, বরং পিতামাতার আচরণ ও ব্যবহারের মধ্যে লুকিয়ে থাকে।
একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো-পিতামাতার বারবার তুলনা করা।
যখন বাবা-মা নিয়মিতভাবে সন্তানদের একে অপরের সঙ্গে তুলনা করেন, তখন তাদের মধ্যে এক ধরনের অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। এই মানসিক প্রতিযোগিতা ধীরে ধীরে ঈর্ষা, হীনমন্যতা এবং দূরত্বের জন্ম দেয়। ফলে ভাইবোনেরা একে অপরকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখতে শুরু করে, সহযোগী বা বন্ধু হিসেবে নয়।
এছাড়াও, অনেক সময় পিতামাতা নিজেদের অজান্তেই পক্ষপাতমূলক আচরণ করেন-কাউকে প্রিয় সন্তান, শ্রেষ্ঠ বা অধিক স্নেহযোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করেন, আর অন্যজনকে অবচেতনভাবে অবহেলা করেন।
এই বৈষম্যমূলক আচরণ ধীরে ধীরে সম্পর্কের মধ্যে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং ছোটখাটো মতভেদও বড় ঝগড়ায় রূপ নেয়।
আরও গভীরে গেলে দেখা যায়, এই বিরোধের একটি মূল কারণ হলো কিশোরের মধ্যে থাকা “মনোযোগ পাওয়ার প্রয়োজনীয়তা”।
কৈশোরে প্রত্যেক ছেলে-মেয়ে চায় তাকে দেখা হোক, তাকে শোনা হোক, তার মূল্যায়ন হোক। যখন পিতামাতা সন্তানের ইতিবাচক দিকগুলো লক্ষ্য করেন না, প্রশংসা করেন না, পর্যাপ্ত ভালোবাসা দেখান না, বরং সবসময় সমালোচনা ও দোষারোপ করেন-তখন সন্তান সেই অভাব পূরণ করতে চায় যেভাবেই হোক।
এই পরিস্থিতিতে, ঝগড়া করা কখনও কখনও তার অস্তিত্ব জানানোর বা মনোযোগ আকর্ষণের এক প্রতীকী উপায় হয়ে দাঁড়ায়।
যেমন আগেই বলা হয়েছে, ভাইবোনদের দ্বন্দ্বে পিতামাতার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ কৈশোরে শিশুদের মানসিক সংবেদনশীলতা অত্যন্ত প্রবল থাকে। এই সংবেদনশীলতা বা “সহজে কষ্ট পাওয়া” তাদের মানসিক বিকাশের স্বাভাবিক অংশ।
ফলে, সামান্য অবিচার বা অসম আচরণ -যদিও পিতামাতার দৃষ্টিতে যুক্তিযুক্ত মনে হয়-তবুও কিশোর সন্তান সেটিকে অন্যায় মনে করতে পারে এবং তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে।
কখনও দেখা যায়, পরিবারের এক সন্তান শিক্ষায় সাফল্য, শান্ত স্বভাব, বা পিতামাতাকে সহায়তা করার জন্য বেশি প্রশংসা পায়। এসব যুক্তি বাবা-মায়ের কাছে যুক্তিসঙ্গত মনে হলেও, ন্যায়বোধে সংবেদনশীল এক কিশোরের কাছে তা অন্যায় ও কষ্টদায়ক মনে হতে পারে।
ফলস্বরূপ, এই “বৈষম্যের অনুভূতি” ভাইবোনদের মধ্যে বিরোধের জন্ম দেয়।
অন্যদিকে, কিছু ঝগড়া আবার ভাইবোনদের নিজেদের আচরণ ও একজনের সীমা অন্যজনের না বোঝার কারণে ঘটে।
কৈশোরে “ব্যক্তিগত পরিসর” বা নিজস্ব গোপনীয়তার প্রয়োজনীয়তা অনেক বেড়ে যায়। একজন কিশোর হয়তো একা থাকতে চায়, নিজের ঘরে ফোনে কথা বলতে চায় বা কারও সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে চ্যাট করতে চায়।
কিন্তু যদি তার ভাই বা বোন অনুমতি ছাড়া ঘরে ঢুকে পড়ে বা কৌতূহলবশত তার ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলায়, তখন সেটি কিশোরের কাছে নিজস্ব সীমানায় অনধিকার প্রবেশ হিসেবে মনে হয় এবং ঝগড়ার সূত্রপাত ঘটায়।
সুতরাং, একজনের ব্যক্তিগত সীমার প্রতি অজ্ঞতা ও অসম্মান-কৈশোরে দ্বন্দ্বের অন্যতম প্রধান কারণ।
পরিবারে এই সীমারেখাগুলোর প্রতি সচেতনতা ও সম্মান প্রদর্শনই পারে সম্পর্ককে দ্বন্দ্বমুক্ত, সম্মাননির্ভর ও শান্তিময় করে তুলতে।
আপনার কমেন্ট